ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন নদীর বুক সোনালী ধানের ফসল ।
Daily Mukti Samachar - দৈনিক মুক্তি সমাচার: মে ২৫, ২০২৫

ঠাকুরগাঁও জেলায় মানচিত্রের বুকে বয়ে যাওয়া বৃহত্তম নদী টাঙ্গন। বর্তমানে এই টাঙ্গন নদীর চিত্র ভিন্ন। নদী যেন তার রূপ হারিয়ে যেতে বসেছে।
নদীর বুক চিরে ফলানো হয়েছে সোনালী বোরো ধান, ভুট্টা, বাদাম সহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি। আর এই বোরো ধানের ভালো ফসল পেয়ে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। বর্ষাকালে টাঙ্গন নদীর পানি বেড়ে গেলে দুকূল ছাপিয়ে যেত, সৃষ্টি হতো বন্যা। নদীর তীরবর্তী এলাকার কৃষকরা ফসল ফলাতে পারতেন না। তবে গত কয়েক বছর ধরে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। পূর্বে কৃষকেরা এই চরগুলোকে পতিত ফেলে রাখতো। বর্তমানে কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শ এবং প্রান্তিক কৃষকদের নদীর পতিত জমিতে ধান চাষে বিভিন্ন প্রণোদনার আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহের ফলে সেই পতিত জমিতে এখন ফলছে সোনার ফসল। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায় চলতি মৌসুমে টাঙ্গন নদীর বুকে প্রায় ৩০-৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাট, খড়িবাড়ি, চাপাতি সহ বিভিন্ন এলাকার কৃষক আব্দুল আলী, আকবর , রহিম জানান, আগে এই জমিগুলো অনাবাদী ছিল। এখন ধান চাষ করে তারা বেশ ভালো লাভ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা। আর ধান বিক্রি করে তারা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। অর্থাৎ, তাদের লাভ প্রায় দ্বিগুণ। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা জগদীশ শর্মা জানান, টাঙ্গন নদীর চরের মাটি ধান চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পলিমাটি থাকার কারণে ফলনও বেশ ভালো হয়। কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করছে। আগামীতে আরও বেশি জমিতে ধান চাষের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। কৃষকেরা জানান, নদীর বুকে ধান চাষ তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। একদিকে যেমন অনাবাদী জমি চাষের আওতায় এসেছে, তেমনি অন্যদিকে অভাবী মানুষেরা খুঁজে পেয়েছে নতুন আয়ের উৎস।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাসিরুল আলম জানান, টাঙ্গন নদীর বুকে সোনালী ধানের হাসি কৃষকদের জীবনে এনে দিয়েছে নতুন আশা ও সম্ভাবনা। পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে দ্বিগুণ লাভবান হওয়ায় তারা এখন অনেক খুশি। কৃষি বিভাগ যদি তাদের সমস্যাগুলো সমাধানে সঠিক পরামর্শ দিয়ে আসছে তিনি আশা করেন, এই অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকেরা আরও সমৃদ্ধি লাভ করতে পারবে। ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাকারিয়া এই সাংবাদিকদেরকে বলেন, নদীর বুকে ধান চাষ করায় যেমন ধান উৎপাদন হচ্ছে অপর দিকে নদীর বুকে ধান চাষে এবং ধানের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করা হয় এতে করে দেশীয় মাছসহ জলজ উদ্ভিদের উপর বিরূপ প্রভাব পরছে। তিনি আরও বলেন জলজ উদ্ভিদের উপর বিরূপ প্রভাবের কারণে নদীতে দেশীয় মাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, এবং নদীর বুকে ধান চাষ করতে গিয়ে কৃষকরা নদীর পাড় কেটে কৃষি জমি তৈরি করছেন এর ফলে নদীর জলধারা যেমন রোধ হচ্ছে তেমনি নদী তার নাব্যতা হারাচ্ছে।
যোগাযোগ: হয়বতপুর, নাটোর।