ফলপ্রসূ শিক্ষাদানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সুসম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম

Daily Mukti Samachar - দৈনিক মুক্তি সমাচার: অক্টোবর ১৮, ২০২৪

ফলপ্রসূ শিক্ষাদানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সুসম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম নিজস্ব প্রতিবেদক,  

শিক্ষার্থীরা যেকোনো জাতির ভবিষ্যৎ এবং তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য একজন বিশ্বাসযোগ্য পরামর্শদাতার প্রয়োজন। এখানে একজন শিক্ষকের প্রয়োজন দেখা দেয় যিনি তাদের একাডেমিক এবং পাঠ্যক্রম বহির্ভূত উভয় ক্রিয়াকলাপের সাথে গাইড করবেন। শিক্ষকগণের সুচিন্তিত নির্দেশনায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষার অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করে।

বাবা-মায়ের পর শিক্ষকই এমন ব্যক্তি যিনি শিক্ষার্থীদের কাছে দ্বিতীয় পিতা বা মাতার মর্যাদায় যে আসীন হন তার মূলে রয়েছে শিক্ষার্থীর জীবনে শিক্ষকের বিশেষ ভূমিকা। তাই শিক্ষক- শিক্ষার্থীর সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকায় বিশেষ কার্যকর হলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উভয়ের ভূমিকা ও অবস্থানের ওপর ঐ সম্পর্কের প্রকৃতি নির্ভর করে এবং সম্পর্কটি মধুর ও পবিত্র হলে তার ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবন স্বার্থক ও মহিমান্বিত হয়ে ওঠে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি মধুর সম্পর্ক বিদ্যমান। যেমন অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘনকালো রাত্রিতে ধ্রুবতারা পথচারীকে পথের সন্ধান দেয়, তেমনি অজ্ঞতার গহীন অন্ধকারেও একজন শিক্ষক জ্ঞানের মশাল হাতে এগিয়ে আসেন। তার সেই প্রদীপ্ত জ্ঞানের মশাল জ্বলে ওঠে তা হলো স্বার্থহীন মধুর সম্পর্ক।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি ও বজায় রাখার জন্য সারা বছর বিভিন্ন কৌশল চর্চা করা যেতে পারে যাতে একটি সুস্থ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। কৌশলগুলো নিম্নরূপ-

১. প্রতিদিন ক্লাসের শুরুতে শিক্ষার্থীদের সাথে কুশল বিনিময় করা এবং শেষে শুভ বিদায় জানানো। ২. স্কুল শুরু হওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের একটি পোস্ট কার্ড পাঠানো যাতে তারা বুঝতে পারে শিক্ষক হিসেবে তাদের ক্লাসে থাকার জন্য আপনি কতটা উন্মুখ। ৩. পাঠের মধ্যে শিক্ষকের ব্যক্তিগত গল্প ও অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত করা। এটি একজন শিক্ষককে শিক্ষক হিসাবে মানবিক করে এবং পাঠকে আরো আকর্ষণীয় করে। ৪. শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে বা অনুপস্থিত থাকলে অভিভাবকের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলা বা টেক্সট করা। ৫. শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ হাস্যরসপূর্ণ বা কৌতুকময় পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং শিক্ষক হিসাবে ভুল করলে তা নিয়ে হাসতে ভয় না পাওয়া। ৬. শিক্ষার্থীর বয়স ও লিঙ্গের উপর নির্ভর করে প্রতিদিন আলিঙ্গন, হ্যান্ডশেক বা মুষ্টিবদ্ধ করে তাদের ক্লাস শেষে বিদায় জানানো। ৭. পাঠদানের সময় পাঠের বিষয় সম্পর্কে নিজে উৎসাহী হওয়া যাতে শিক্ষার্থীরাও উৎসাহের সাথে অংশগ্রহণ করে। ৮. শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম অংশগ্রহণে সমর্থন করা ও আয়োজন করা। যেমন: বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি, গান, বিতর্ক, অভিনয়, চিত্রাংকন ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করানো। ৯. অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে আলাদাভাবে অতিরিক্ত সময় দিয়ে সহায়তা করা। ১০. শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে তাদের পারগতার মাত্রানুযায়ী ফলাবর্তন দিয়ে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা। ১১. শিক্ষার্থীদের একটি কাঠামোগত পরিবেশ প্রদান করা। বছরের প্রথম দিনে পদ্ধতি এবং প্রত্যাশা স্থাপন করা এবং সারা বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগ করা। ১২. শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের সবল ও দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করা এবং দুর্বল দিকগুলো উন্নয়ন করে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করা। ১৩. প্রত্যেক শিক্ষার্থীই শিক্ষকের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ তা তাদের বিশ্বাস স্থাপনে নিশ্চয়তা প্রদান করা। ১৪. শিক্ষার্থীদের সম্মন্ধে উচ্চ আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা এবং তাদেরকে উচ্চ আকাঙ্ক্ষা রাখার জন্য শিক্ষা দেওয়া। ১৫. শৃঙ্খলাবোধে আপোষ না করা যাতে শিক্ষার্থীরা নিয়মানুবর্তিতা হয়ে বেড়ে ওঠে। ১৬. শিক্ষার্থীদের সাথে মাঝে মাঝে দুপুরের খাবার খাওয়া যাতে শ্রেণিকক্ষের বাইরেও সম্পর্ক মধুর থাকে। ১৭. শিক্ষার্থীর সফলতা, কৃতিত্ব বা জন্মদিন উদযাপন করা যাতে তাদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয়। ১৮. শ্রেণিকক্ষে সবসময় হাস্যোজ্জ্বল থাকা। ১৯. শিক্ষার্থীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা যাতে তারা বুঝতে পারে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ২০. শিক্ষার্থীর সাথে স্বাভাবিক কথোপকথন করা যেমন: তাদের শখ, আগ্রহ, কোন কিছু জানতে চাওয়া সেটা হতে পারে শ্রেণিকক্ষে, বিদ্যালয় শুরুর পূর্বে বা পরে। ২১. শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা। ২২. কার্যকরী হোমভিজিট করা। ২৩. প্রতিদিন পাঠকে আকর্ষণীয় করার জন্য অপ্রত্যাশিত বা উত্তেজনাপূর্ণ আনন্দদায়ক কিছু কর্মকাণ্ড করা যেমন: পাঠ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা যাতে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসতে চায়। ২৪. বিদ্যালয়ের বাইরে তাদের সাথে দেখা হলে আন্তরিকভাবে কথা বলা।

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, শিক্ষকদের জন্য শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা এমন একটি উপাদান যা শিক্ষাকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যায়। সম্পর্ক তৈরি করা একটি প্রক্রিয়া। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে প্রায়ই সপ্তাহ এমনকি মাসও লেগে যেতে পারে। একবার শিক্ষার্থীর আস্থা ও সম্মান অর্জন করলে বাকি সবকিছু অনেক সহজ হয়ে যায়। তখন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসার জন্য উম্মুখ থাকে এবং তাদের শিখনফল স্থায়ী হয়। তাই শিক্ষাদানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সুসম্পর্কের কোন বিকল্প নেই। এর গুরুত্ব অপরিসীম।

  লেখক: আয়েশা খাতুন প্রধান শিক্ষক'পশ্চিম মাড়াদেওরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলপুর ময়মনসিংহ।

যোগাযোগ: হয়বতপুর, নাটোর।
ই-মেইল: dailymuktisamachar@gmail.com