Daily Mukti Samachar - দৈনিক মুক্তি সমাচার: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ খোকন হাওলাদার,
পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নামতে না পাড়ায় কারণে ঢাকার আশুলিয়ায় বেশ কয়েকটি সড়কে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক, শ্রীপুরের দক্ষিণ পাশে ফিনিক্স-কোয়ার্টার সড়ক, বলিভদ্র বাজার-তালপট্টি সড়ক, জামগড়া প্রাইমারি স্কুল সড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে থেকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সরেজমিন ওই সড়কগুলোতে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের ইউনিক বাসস্ট্যান্ড থেকে জামগড়া চৌরাস্তা পর্যন্ত পুরো সড়কে পানি জমে থাকে। সড়কের বেশি ভাগ স্থানে খনা-খন্দের সৃষ্টি হয়ে আছে। আর এতে চরম ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন পরিবহন। দীর্ঘ দিন ধরে ব্যস্ততম এই সড়কের এমন অবস্থার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্পকারখানা এবং বাসা বাড়ির পানি সরাসরি সড়কে পড়া এ সড়কটিতে জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। সেই সাথে ওই এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া নয়নজুলি খাল ভরাট হয়ে যাওয়া পানি বের হতে না পাড়ার কারণে সব সময়ই জলাবদ্ধতা থেকে যায়। সড়কে পানি জমে থাকার কারণে এবং সড়কের উভয় পাশে ড্রেনেজ করার জন্য মাটি খুঁড়ে রাখার কারণে স্থানীয় দোকানদাররা পড়েছেন চরম বিপাকে। এ অবস্থা থাকার কারণে ক্রেতারা আসছেন না।
এ দিকে শ্রীপুরের দক্ষিণ পাশে ফিনিক্স কোয়ার্টার সড়কটি সামান্য বৃষ্টিতেই কোমর পানিতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। পানি নামতে না পাড়ার কারণে অনেকের ঘরে পানি উঠেছে। ফলে অনেকেই বাসা পাল্টে অন্যত্র চলে গেছেন। কোমর পর্যন্ত পানি থাকার কারণে এই সড়কটি দিয়ে রিকশা ভ্যান তো দূরের কথা খালি পায়েও মানুষ চলাচল করতে পারছে না।
এ এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, তারা বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সকালে ডিউটিতে যেতে হয় আবার রাতে ফিরতে হয়। কিন্তু সড়কে পানি জমে থাকার কারণে এখান দিয়ে কেউ চলাচল করতে পারে না। অনেক দূর ঘুরে অন্য রাস্তা ব্যবহার করে তাদের কারখানায় যাওয়া আসা করতে হচ্ছে।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ওই এলাকা থেকে বাসা পাল্টে অন্যত্র চলে যাচ্ছিলেন নজরুল ইসলাম মানিক নামের এক ব্যক্তি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফিনিক্স-কোয়ার্টার রোডের মাথায় একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। কিন্তু গত দুই দিনের বৃষ্টিতে এই সড়কটি তলিয়ে রয়েছে। পানি কিছুতেই নামছে না। এই সড়কের পাশে কোনো ড্রেনেজ নেই। তা ছাড়া শ্রীপুর, বলিভদ্র বাজার, তালপট্টি এলাকার পানি এখান দিয়েই নামে। এখানকার একটি চুঙ্গি ছিল তা ময়লা-আবর্জনা পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে, শ্রীপুরে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যেখান দিয়ে পানি নামত তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পানি কিছুতেই নামতে পারছে না। এই সড়কটি ছাড়া এ এলাকার মানুষের চলাচলের জন্য অন্য কোনো সড়ক নেই। তাই বাধ্য হয়েই বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছি।
জামগড়া প্রাইমারি স্কুলের সড়কটির আশপাশে হাজার হাজার মানুষের বসবাস। ওই সড়কটিরও দীর্ঘ দিন ধরে একই অবস্থা। সামান্য একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ দিন ধরে এমন অবস্থা থাকার পরেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি। তাই চরম ভোগান্তি নিয়েই এসব অঞ্চলে বসবাসরতরা চলাচল করছে।
শুধু এসব সড়কই নয়। আশুলিয়ার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কেরই একই অবস্থা। এ ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি করা, রাস্তা করার সময় পানি নিষ্কাশনের জন্য পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করাসহ বিভিন্ন কারণে সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সড়ক ও জনপথের ঢাকা বিভাগীয় উপসহকারী প্রকৌশলী বদিউজ্জামান বলেন, এক একটি কারখানা ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি ছাড়ে। সেই পানি সরাসরি সড়কে এসে পড়ে। আমাদের সড়কের পানি নির্গমনের জন্য যে পথ বের করা হয়েছিল সেই পথ দিয়ে সড়কের পানি সুন্দর করে যেতে পারবে। কিন্তু যখন এলাকা ও কারখানার পানি সড়কের পানির সাথে মিশে যায় তখন আর সেই পথ দিয়ে পানি যেতে দেরি হয় এবং সড়কে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কারখানার মালিকদের নিজেদের মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা উচিত। আমাদের ড্রেন দিয়ে তাদের পানি নামার কথা নয়। তবুও আমরা চেষ্টা করছি যেন সড়ক থেকে পানি নামিয়ে ফেলা যায়।