ঢাকা   ২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । ১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
জাফলং–ডাউকি নদীতে ‘বালু দস্যুদের দৌরাত্ম্য  ইজারাবিহীন এলাকা থেকে ৫ কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন, ক্ষতির পরিমাণ ১হাজার ৫০০ ( শত) কোটি টাকা! বালুগুলো জব্দের জোর দাবি।  মাতৃজগত পত্রিকার ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষীতে সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চন্দ্র সরকারের শুভেচ্ছা জয়পুরহাটে “উলামায়ে দেওবন্দের অবদান” শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত কালিয়া বি এন বি নেতাদের বিরুদ্ধে অপ-প্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন। লোহাগাড়ায় অজ্ঞাতো মরা দেহটি পরিচয় মিলল্ল। গোপালগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে দুদকের অভিযান। মাদারীপুরের রাজৈর এ সাংবাদিক এস এম ফেরদাউস এর উপর অতর্কিত হামলা। নারায়গঞ্জে বন্দর উপজেলায় তুলার কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ৫০ লাখ টাকা। শীতলক্ষ্যায় ট্রলার-কার্গো সংঘর্ষের আতঙ্কে নদীতে ঝাঁপ যাত্রীদের ! নারায়ণগঞ্জের বন্দর মদনপুর ঢাকা সংযোগ সড়ক ট্রাক দুর্ঘটনায় ৮ কিলোমিটার যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে !

নড়াইলে অসময়ে ভাঙছে নদী বিপাকে নদী পাড়ের মানুষ

Dainik Muktir Songbad
  • প্রকাশিত : শুক্রবার, মে ২, ২০২৫
  • 20 শেয়ার

মোঃ রাসেল শেখ, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:

 

নড়াইলের মধুমতী নদীর অসময়ে ভাঙছে বিপাকে নদী পাড়ের মানুষ। শুধুমাত্র বালু উঠানোর কারণে আমার বাড়ি ভাঙছে। আমি গরিব-অসহায়। অন্য কোথাও যে বাড়ি করব, আমার এক ফোঁটা জমি নেই। আমার স্বামী নাই একটা ছেলে নাই আছে চারটা মেয়ে। এখন আমি কোন উপায়ে কি করব? জানুয়ারি মাসে বৃষ্টি-বাদল কিছুই নাই। তখন আমার বসতভিটা ভাঙছে।

ভিটের বাকি অংশ এখনো ভাঙছে। বৃষ্টি এলেই একেবারে সব ভেঙে চলে যাবে। এখন আমার যাওয়ারও কোনো জায়গা নাই। রোববার বিকেলের দিকে কথা গুলো বলছিলেন লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর গ্রামের বৃদ্ধা শামসুন্নাহার বেগম (৬৫)। তাঁর বাড়ির সামনে মধুমতী নদী থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়।

সেই বালু স্তূপ করে রাখা হয় শামসুন্নাহারের বাড়ির পিছনে। বালু উত্তোলন করায় বাড়ির সামনে থাকা বাঁধের বস্তা নেমে চলে যায় নদীর মাঝে। আর স্তূপ করে রাখা বালুর পানির টানে নদীগর্ভে গেছে শামসুন্নাহারের ভিটে-মাটি।

শামসুন্নাহারদের গ্রাম কাশিপুর, তার পার্শ্ববর্তী মাকড়াইল, রামচন্দ্রপুর ও নওখোলা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে—মধুমতী নদীতে পানি কম, ঢেউ নেই, তবুও চলছে ভাঙন। এসব এলাকার কিছু কিছু স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া বালুর বস্তা সরে গিয়ে নদীতে তলিয়ে গেছে, ফলে আগের বাঁধ ভেঙে পড়ে নতুন করে ভাঙছে নদীতীর।

শামসুন্নাহারের মত অনেকের বসতভিটা, ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। ঝুঁকিতে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে ১৯৪৫ সালে নির্মিত মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশেপাশের তিনটি স্কুল, কয়েকটি মসজিদ, আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গ্রামীণ সড়ক।

স্থানীয়দের ভাষ্য, বহু বছর ধরে এ অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে মধুমতী নদী ভাঙলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড গত কয়েক বছর কিছু স্থানে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ দেওয়ায় ভাঙন কিছুটা কমেছিল। কিন্তু ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ইজারাকৃত এবং ইজারা বহির্ভূত বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করায় বাঁধের অনেকাংশ ভেঙে পানিতে নেমে গিয়েছে।

যার কারণে এ বছর অসময়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীতীরের বাসিন্দা বৃদ্ধা মর্জিনা বেগম বলেন, আগে দুইবার নদীতে আমাগের বাড়ি ভাঙিছে, কষ্ট করে নতুন করে বাড়ি করিছি। মেলা জমি নদীতে চলে গেছে। এখনকার বাড়িও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়ছে।

মাকড়াইল গ্রামের ফজলুল মৃধা বলেন, আমাদের কয়েক একর জমি এই নদীতে গিলেছে। ভাঙন আতঙ্কে আমার এক ভাই ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র চলে গেছে। নদী থেকে যত্রতত্র বালু উত্তোলনের কারণে আমার বাড়ির সামনে দেওয়া বাঁধের বস্তা পানিতে নেমে ভাঙন শুরু হয়েছে। বাড়ির পাশের ব্রিটিশ আমলের স্কুলটিও হুমকির মধ্যে আছে। ভাঙন আতঙ্কে থাকা বাসিন্দারা বলেন, সম্প্রতি তাঁরা অভিযোগ দিলে ইজারা বহির্ভূত এলাকায় প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে।

এছাড়া নতুন বছরে ওই এলাকার বালুমহলের ইজারাও বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন, এতে স্থানীয়রা খুশি। তবে তাঁরা চাই, এটি যেন স্থায়ী হয়। আর কোনোভাবেই যেন কেউ বালু উত্তোলন করে তাঁদের ক্ষতি করতে না পারে। তাঁরা বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধ হলেও, ভাঙন তো আর থেমে নেই, তাই ভাঙনকবলিত স্থানে বালুর বস্তা ফেলে সাময়িক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হোক। আর স্থায়ী সমাধানের জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করা হোক।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রিয়াদ বলেন, ইতোমধ্যে নদী ভাঙনের কারণে ওই এলাকার বালুমহলের ইজারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ এখন অবৈধভাবে আর কেউ বালু উত্তোলন করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নড়াইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, নিয়ম না মেনে বালু উত্তোলন করার কারণে নদীতীরে করা আমাদের প্রতিরক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইতোমধ্যে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন ও ওই এলাকার বালুমহলগুলোর ইজারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৪