ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ- মোঃ আলমগীর শরীফ
ঝালকাঠির রাজাপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল বড়ইয়া ইউনিয়নের মেয়ে ছালমা বেগম। বিশখালি নদীর তীরবর্তী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বেড়ে ওঠা ছালমার, স্বামীর বাড়িও একই এলাকায়। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া ছালমা বেগমের আর্থীক অবস্থায় তেমন সচ্ছল না থাকলেও গানের প্রতি ভালোবাসা কমাতে পারেনি তার শত দারিদ্রতা। আর সেই শক্তি দিয়েই ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ এর চুরান্ত অডিশনে সে পল্লীগীতির নিয়মিত শিল্পী হয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে এবং বাউল গানের নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী হয়েছেন বাংলাদেশ বেতারের। উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের কৃষক মরহুম ইয়াকুব আলীর ২য় মেয়ে এবং ৯ নং ওয়ার্ডের জনপ্রিয় সমাজকর্মী ও সাংবাদিক আলমগীর শরিফের সহধর্মিণী এবং ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য। ছালমা বেগম ইউপি সদস্য হিসেবেও এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। মানব সেবায় প্রতিনিয়ত ছুটে চলাই এই জনপ্রিয়তার কারন ছালমার। মানব সেবার পাশাপাশি করে থাকেন গানের চর্চা। তাইতো আজ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের মত জায়গায় অবস্থান করে নিয়েছেন তিনি। বাউল ছালমা নামে পরিচিতি লাভ করা ছালমা বেগমের গানে যেমন দক্ষতা তেমন সামাজিক বিভিন্ন ভালো কর্মকান্ডের কারনেও আলোচিত। অদম্য মনোবল নিয়ে এগিয়ে চলার কারনে আজকে তিনি হয়েছেন রাজাপুর উপজেলা ও ঝালকাঠি জেলার শ্রেষ্ঠ জয়ীতা। পেয়েছেন ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসে জেলায় একমাত্র অপরাজিতা সম্মাননা স্মারক। গান গেয়ে তিনি অর্জন করেছেন একাধিক সনদ ও সম্মাননা স্মারক। এছাড়াও পেয়েছেন বেসরকারী চ্যানেল এটিএন বাংলা টিভি ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কলের গান কর্তৃক যৌথ আয়োজনে ২০২৩ এর স্টার এ্যাওয়ার্ড। পাশাপাশি নিজেকে সাবলম্ভী হিসেবে গড়ে তুলতে সেলাই কাজ, কৃষি কাজ, হাস মুরগী ও গবাদিপশু পালন, মাছ চাষসহ একাধিক প্রশিক্ষণের সনদ আছে তার দক্ষতার ফাইলে।
গানের প্রতি তার টান এবং ভালোবাসা দেখে স্থানীয় সংগীতশিল্পী আব্দুর রাজ্জাক তাকে গান শেখানোর দায়িত্ব নিয়েছিলো স্থানীয় নাছিমা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে ৪র্থ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায়। ২০০৮ ইং সন থেকে এর পাশাপাশি গানে যথেষ্ট সহযোগীতা করেছেন রাজাপুর সদরের মাঈনুল হাসান মৃধা, বরিশালের সংগীত পরিচালক ঈমন খান, রাজাপুরের আসলাম হোসেন মৃধা ও সিরাজুল ইসলাম। বর্তমানে ওস্তাদ হিসেবে গান শিখাচ্ছেন দেশের সকলজন পরিচিতো কন্ঠশিল্পী আসরাফ উদাস। এছাড়াও সকল ভালো কর্মে উৎসাহিত করেছে তার নিজ জেলা উপজেলার সকল সাংবাদিকরা-সহ বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। গুরুজনের শিক্ষা ও পদস্থ মানুষের উৎসাহ পেয়ে তিনি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে অনেক পুরস্কার জিতে নেন। এরপরে স্বমীর ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টায় আজকে ছালমা বেগম এ পর্যন্ত এসেছেন এবং দেশব্যাপী সুনাম ও পরিচিতি অর্জন করেছেন। ছোটবেলা থেকেই সংগীতপ্রেমী হওয়ায় নিজেই শতাধিক গান রচনা, সুর দেওয়া ও পরিবেশন করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমন্ত্রিত হয়ে দেশাত্মবোধক, বাউল,পল্লীগীতি, লোকগীতি, ভাওয়াইয়া,ছায়াছবি ও ফোক গান গেয়ে থাকেন ছালমা। যার কারনে আজ তিনি সবার কাছে বাউল ছালমা হিসেবে পরিচিত। ইতোমধ্যে ছালমা জড়িয়ে রয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে।
বর্তমানে ছালমা > নিজ এলাকার জনপ্রিয় নারী ইউপি সদস্য, > উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পী ও নির্বাহী সদস্য, > বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার কল্যাণ এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, > বাংলাদেশ টেলিভিশনে দুইটি বিষয়ের উপর নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী, > বাংলাদেশ বেতার বরিশালের নিয়মিত বাউল কণ্ঠশিল্পী, > বাংলাদেশ জাতীয় বাউল সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, > রাজাপুর উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক, > নিবন্ধনকৃত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান “বাউল ছালমা শিল্পীগোষ্ঠী” এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, (উক্ত সংগঠনটিও বিটির তালিকাভুক্ত), > উপজেলা অপরাজিতা নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক, > জেলা অপরাজিতা নারী নেটওয়ার্কের কার্যনির্বাহী সদস্য, > রাজাপুর সংবাদিক ক্লাবের নির্বাহী সদস্য। এবিষয়ে ছালমা বেগম প্রতিবেদককে বলেন আমি এছাড়াও গাছে উঠা, নদীতে নৌকা চালানো, গভীর জলে মাছ আহরন, মাছ আহরন করা, মাটি কাটা, জমি চাষাবাদ ও ফসল রোপণ-বপন কারাসহ সকল প্রকার পারিবারিক কর্ম করার অভিজ্ঞতা আমার আছে এবং করি। ভবিষ্যতে মানুষের তথা জীবের সেবা করে-ই আমার বাকী জীবন অতিবাহিত করতে চাই। ।