ঢাকা   ২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
দুর্গাপুরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বাবুলের রোগ মুক্তি কামনায় চুনারুঘাট উপজেলা ও পৌর যুবদলের দোয়া মাহফিল। হিন্দু থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন একই পরিবারের- ০৪ জন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ” নতুন রূপে প্রকাশিত হওয়ায় চুনারুঘাটে কেক কাটা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত জৈন্তাপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে শ্রেনী কক্ষের সংকট বিশালপুর ইউনিয়নের মৎস্যজীবী দলের কমিটি প্রকাশ কুষ্টিয়ায় দখলবা‌জি-চাঁদাবা‌জি নি‌য়ে জেলা বিএন‌পির ক‌ঠোর হুঁশিয়ারি নতুন দুই সভাপতি পেল ইবির দুই বিভাগ জকিগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ না করার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন বগুড়ার গাবতলীতে ট্রেনে কাটা পড়ে মহিলার মৃত্যু- ০১

নওগাঁয় দীর্ঘ ১০ বছর ধরে রাস্তার পাশে বৃদ্ধ মা অতঃপর খোঁজ রাখে না ছেলে

Dainik Muktir Songbad
  • প্রকাশিত : শুক্রবার, মে ১০, ২০২৪
  • 29 শেয়ার

উজ্জ্বল কুমার সরকার, নওগাঁ প্রতিনিধি:

 

নওগাঁ মান্দা উপজেলার ৩ নম্বর পরানপুর ইউনিয়নের, চককেসব গ্রামে ১০ বছর ধরে রাস্তার পাশে বৃদ্ধ মা, খোঁজ রাখেন না ছেলে। ‘‘ রাতের বেলা হামার ব্যাটা হামাকি বাড়িত থ্যাকে (থেকে) বার করে দিছে, কছে (বলেছে) এই বাড়িত যান না ফিরি। হামি আমার ব্যাটা আর ব্যাটার বউয়ের কাছে বোঝা। প্রায় ১০ বছরের বেশি হলো হামি (আমি) রাস্তাত থাকি, কেউ খোঁজ ল্যায় (নেয়) না।”এভাবেই আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন ৬৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধ মা মিরজান ওরফে মীরো।

তিনি জানান, ছেলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে অনেকে আগেই। ১০ বছর ধরে খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে জীবনযাপন করছেন তিনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁর মান্দা উপজেলার ৩ নম্বর পরানপুর ইউনিয়নের, চককেসব গ্রামে রাস্তার পাশের ঝুপড়ি ঘরে ঝাড়ু বানিয়ে ও গ্রামের মানুষদের ঝাড়ু বেঁধে দিয়ে যা আয় হয় সেই টাকা দিয়ে চলছে সংসার। কোনো দিন বিক্রি না হলে না খেয়েও পার করতে হয় তাকে।

আপন বলতে দুনিয়াতে এখন আর কেউ নেই, স্বামীকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। ছেলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর বয়স্ক ভাতার টাকা জমিয়ে কিছু টিন কিনে রাস্তার পাশে কোনোভাবে বাড়ি বানিয়ে থাকছেন। “ছেলে আর বউ আমাকে ভাত দিত না। নানাভাবে অত্যাচার করত, কিন্তু আমার ছেলে কোনো প্রতিবাদ করেনি। হঠাৎ একদিন রাতে ছেলে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বলে, ‘তোমার যেখানে খু্শি সেখানে চলে যাও, আমার বাড়িতে থাকতে পারবে না।’ তাই আমি বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে এখানে এসে ১০ বছর ধরে আছি।”

তিনি আরও বলেন, ‘ আমার অনেক বয়স হয়েছে, এই বয়সে বাহিরে বের হতেও পারি না, তবুও পেটের দায়ে বের হই ঝাড়ু নিয়ে পাড়ায় মহল্লায়। দিনশেষে ২০ থেকে ৫০ টাকা আয় হয় যা দিয়েই চালের খুদ কিনে এনে খাই। যেদিন বের হতে পারি না সেদিন না খেয়ে থাকি কিন্তু কেউ খোঁজ খবর নেয় না।’

মিরজান বলেন, ‘যে ছেলেকে এত কষ্ট করে লালনপালন করলাম, নিজে না খেয়ে তাকে খাওয়ালাম। ভেজা জায়গায় আমি শুয়ে তাকে শুকনো জায়গায় রাখলাম। জীবনের চরম কষ্টে আমার ছেলেকে ভালো রাখলাম, কিন্তু আজ সে বড় হয়ে সব ভুলে গেছে। আমার কষ্ট রাখার মতো কোনো জায়গা নেই, একমাত্র চোখের পানিই আমার সম্বল। ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার মা, দয়া করে যদি থাকার মতো জায়গা করে দিত আমার মা তাহলে বাকি জীবনটা সেখানে থাকতে পারতাম।’

ছেলের নাম পরিচয় বলতে চাননি মিরজান। গোপন রাখার অনুরোধ জানান। সুখে থাকুক তার একমাত্র ছেলে, এটাই কামনা করেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াস হোসাইন বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই এই বৃদ্ধা মাকে এখানে থাকতে দেখি। মূলত আমরাই এখানে থাকার জায়গা দিয়েছি। তার জীবনে এতই কষ্ট যে আমাদের চোখে পানি চলে আসে।’ পথচারী কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি রাস্তার ওপর দিয়ে যাতায়াতের সময় এই ছোট্ট বাড়িটি চোখে দেখি। খুব খারাপ লাগে যে এই বয়সে তিনি এত পরিমাণ কষ্ট সহ্য করে চলাফেরা করেন। বয়স বেশি হওয়ার কারণে ঠিকমতো হাঁটা চলা করতে ও পারে না। বৃদ্ধা মায়ের দ্রুত ব্যবস্থা হওয়াটা জরুরি।’ স্থানীয় বাসিন্দা মজিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের বাড়ির সামনেই এক ছোট্ট ঘর, মাঝে-মধ্যে তাকে খাওয়াই, তবুও কষ্ট লাগে যে তার ছেলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।’

এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এ প্রথম আপনার কাছে থেকে অবগত হলাম। খোঁজ নিয়ে তাকে কীভাবে সহায়তা করা যায় সেই উদ্যোগ নেয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৪