ঢাকা   ২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
দুর্গাপুরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বাবুলের রোগ মুক্তি কামনায় চুনারুঘাট উপজেলা ও পৌর যুবদলের দোয়া মাহফিল। হিন্দু থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন একই পরিবারের- ০৪ জন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ” নতুন রূপে প্রকাশিত হওয়ায় চুনারুঘাটে কেক কাটা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত জৈন্তাপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে শ্রেনী কক্ষের সংকট বিশালপুর ইউনিয়নের মৎস্যজীবী দলের কমিটি প্রকাশ কুষ্টিয়ায় দখলবা‌জি-চাঁদাবা‌জি নি‌য়ে জেলা বিএন‌পির ক‌ঠোর হুঁশিয়ারি নতুন দুই সভাপতি পেল ইবির দুই বিভাগ জকিগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ না করার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন বগুড়ার গাবতলীতে ট্রেনে কাটা পড়ে মহিলার মৃত্যু- ০১

ঢাকার রাজপথে যানজটের কিছু কথা- ইবনে শাহ

Dainik Muktir Songbad
  • প্রকাশিত : শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪
  • 42 শেয়ার

নিজস্ব প্রতিনিধি, 

 

অবশ্য কেউ কেউ বলে ট্রাফিক জ্যাম, আমি ট্রাফিক জ্যাম বলতে রাজি না, কারণ ট্রাফিক জ্যাম তো শুধুমাত্র ট্রাফিক সিগন্যালের কারণেই হয়, কিন্তু সারা শহর জুড়ে যখন মাইলের পর মাইল ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে তখন এটাকে ট্রাফিক জ্যাম না বলে বরং যানজট বলাই ভালো।

বিগত শতাব্দীর ৯০ এর দশকে যারা ঢাকায় বসবাস করেছেন তাঁরা আগে অবশ্যই দেখেছেন ঢাকায় তখন ট্রাফিক জ্যাম হত, বিশেষ করে গুলিস্তান ও সদরঘাট এলাকায় ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে জ্যাম লেগে থাকত। ৯০ এর দশকে ঢাকা শহরের গুলিস্তান এলাকা এবং সদরঘাট এলাকা ট্রাফিক জামের জন্য বিখ্যাত ছিল। আর বলা চলে অন্য সকল রুট ট্রাফিক জ্যাম মুক্ত ছিল, মাঝেমধ্যে হলেও সেটা খুব দ্রুত সরে যেত। অবশ্য কোরবানি ঈদের আগে গাবতলীর গরুর হাটের কারণে গাবতলীর রাস্তায় ৩/৪ দিন বিকেল থেকে রাত অব্দি জ্যাম থাকতো। এই ছিল ৯০ এর দশকে ঢাকার রাস্তার অবস্থা।

৯০এর দশকে ঢাকার রাজপথে প্রধান প্রধান বাহন ছিল রিক্সা, বেবি টেক্সি, টেম্পু, পাবলিক বাস ও বিআরটিসির ডাবল ডেকার। অবশ্য ঢাকার গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ঘোড়ার গাড়ি চলাচল করত। আর প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস ছিল খুব হাতে গোনা। এর কারণ ছিল তখন রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি বন্ধ ছিল। গাড়ি কিনতে চাইলে নতুন ব্র্যান্ডের নতুন মডেলের গাড়ি কিনতে হতো।আজকালের মত সে সময় দু চার বছর অন্য দেশে ব্যবহৃত হওয়ার পরে রিকন্ডিশনিং করে এদেশের আনা হত না। এখন আর বিদেশের মাটিতে রিকন্ডিশনিং এর কাজ হয় না ভাঙ্গাচুরা নিয়ে আসার পর আমাদের দেশেই রিকন্ডিশনিং এর কাজ করা হয়। কারণ বিদেশে লেবার কষ্ট বেশি।

রিকন্ডিশন গাড়ির আমদানির শুরু হয় ৯০এর দশকের পর পরই। ১৯৯১ সাল থেকে আমাদের দেশে দেদারসে জাপানি রি-কন্ডিশন গাড়ি আসতে থাকে । রিকন্ডিশন গাড়ি অল্প দিনেই বিশাল মার্কেট পেয়ে যায়, দামে খুব সস্তা জাপানি গাড়ি টেকসই ভালো। রাতারাতি বিভিন্ন আমদানিকারক লাইন দিয়ে রিকন্ডিশন গাড়ি আনতে থাকে। এমনকি গাড়ি আমদানি কারকদের অ্যাসোসিয়েশনও হয়ে যায়।

রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানির পরে প্রথম ধাক্কায় ভিআইপি রোডে রিকশা চলাচল বন্ধ করা হলো। অর্থাৎ শাহবাগ থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এ রাস্তায় রিকশা চলাচল বন্ধ। বলা হল রিক্সার কারণে ট্র্যাফিক জ্যাম সৃষ্টি হয়, আর এই রাস্তায় হোটেল শাটার্ন পর্যন্ত বিদেশি পর্যটক চলাফেরা করে। তাই দেশের মান রক্ষা রক্ষার্থে ওই রাস্তায় রিকশা বন্ধ করা হয়েছিলো। রিক্সাওয়ালাদের কষ্ট হলেও তারা মেনে নিল। কিন্তু দেখা গেল ভিআইপি রোডে রিক্সা না চললেও ভিআইপি রোডে প্রায় প্রায় যানজট লেগে যেত। কি আশ্চর্য ট্রাফিক জ্যামের কথা বলে রিকশা বন্ধ করা হলো কিন্তু এখন তো মাঝে মাঝে সারা রাস্তায় যানজট লেগে যায়। অথচ মাত্র দুই তিন বছর আগে তো রিকশা চলাচল করলেও ট্রাফিক জ্যাম তেমন হতো না, যানজট তো লাগতোই না। এটা নিয়ে সড়ক বিভাগ বা কর্তাব্যাক্তিরা তেমন নড়েচড়ে বসলো না।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বিংশ শতক পর্যন্ত এত পরিমান রি-কন্ডিশন গাড়ি আমদানি হলো যে যাদের একটি নিউ মডেলের গাড়ি ক্রয় করা সামর্থ্য নেই তার বাড়িতেই দুই তিনটি কন্ডিশন গাড়ি শোভা পেতে থাকলো। একবিংশ শতকের শুরুর দিকে ঢাকা শহরে পেট্রোলের পরিবর্তে সিএনজি দিয়ে গাড়ি চালানো শুরু হলে গাড়ি যেন গণহারে মুড়ি মুড়কির মত কেনা শুরু হয়ে গেল। সরকারি প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা তো বটেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর অনেকে কর্মচারীও গাড়ি কিনে ফেলল। ব্যবসায়ীরা আবার বসে থাকবে কেন, ভাড়া বাড়ি কিংবা ফ্লাট ভাড়া নিয়ে থাকে সেও গাড়ি কিনে ফেলবো। এভাবেই একা বিংশ শতকের প্রথম দশকে ঢাকা শহরের লোকজন এত পরিমান গাড়ি কিনলো যে নিজেদের গাড়ি রাখার ব্যবস্থা নেই তো কি হয়েছে, গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে গাড়ি রাখতে হলো। শুধু কি তাই ঢাকা শহরের পাড়া মহল্লা রাস্তাঘাট খুবই সংকীর্ণ, আমার এলাকার কিছু গণ্যমান্য লোক নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এলাকায় রাস্তা বড় করার জন্য ২০০২-৩ সালে, কত ক্যাম্পিং মিছিল মিটিং করেছি। কিন্তু কেউ এক ফিট জায়গা ছাড়তে চায়নি। অথচ দেখা যায় যারা রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়তে চাইনি তারাই আজ গাড়ি কিনে মহল্লার রাস্তা সারাক্ষণ জ্যাম লাগাচ্ছে।

এখন চিন্তা করুন কেন এমন হলো, বিগত শতকের নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত ঢাকা শহরে কোন যানজট ছিল না। পরবর্তী ১০ বছরে ট্রাফিক জ্যাম বেড়ে গেল, যানজট শুরু হলো ,তারপরও সেটা সহণীয় ছিল। কিন্তু একা বিংশ শতক থেকে আমরা যানজটে হাঁপিয়ে উঠলাম কেন? এই চিন্তা কেউ করি, কেউ বলবেন একা বিংশ শতকে প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে ঢাকায় আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে প্রচুর লোক বেড়েছে তাই তো যানজট হচ্ছে। কিন্তু আমার কথা হলো আবাসন গড়ে উঠেছে বাড়িঘর গড়ে উঠেছে এজন্য কি রাস্তা হয়নি? নতুন নতুন অনেক রাস্তাও তো হয়েছে। আপনারা খেয়াল করে দেখুন মূল শহরের বাইরে যে সকল অঞ্চলে আবাসন গড়ে উঠেছে সে সকল অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে প্রশস্ত রাস্তা হয়েছে। একা বিংশ শতকে এসে ৬০ফিট ৯০ ফিট ৩০০ ফিট প্রশস্তের রাস্তা হয়েছে, উড়াল সড়ক, ফ্লাইওভার হয়েছে তারপরও কি যানজট কমেছে, রিক্সা সে তো কবেই প্রধান প্রধান সড়ক থেকে উঠে গেছে। তবুও যানজট কমছে না কেন এই চিন্তা কেউ করছে না করলেও “বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে”। কারণ আসল কথা বলতে গেলে ধরে মাথা থাকবে কিনা তার নিশ্চয়তা কে দিবে?

আমার মত ভুক্তভোগীদের মতামত হলো ঢাকা শহরের যে পরিমাণ দূরত্বের রাস্তা আছে তা পৃথিবীর অন্য কোন শহরে নেই, আমাদের ছোট শহরে এত লোকের বাস যে পৃথিবীর অন্য কোন দেশেই এমন নেই। যেহেতু আমাদের শহর ছোট রাস্তার সংখ্যা কম এবং সংকীর্ণ সুতরাং এই শহরে বসবাস করে দিনের বেলায় ফুটানিকা ডিব্বা ব্যবহারের কোন প্রয়োজন নেই। ফুটানিকা ডিব্বায় রাত ৯টার পরে চড়ুন শহরের রাস্তার কোনো অসুবিধা হবে না। একটি প্রাইভেট কার, একটি মাইক্রোবাস, একটি জিপ গাড়িতে একজন করে লোক চলে অথচ এই যানগুলোর রাস্তার কত শতাংশ দখল করে হিসেব করে দেখেছেন। একটি লোকের জন্য একটি যানবাহন এটা তো আমাদের মধ্যে মতো গরিব দেশের ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরীতে শোভা পায় না। যদি নিয়ম করা হয় সকাল ৭টা থেকে সকাল রাত ৯টা পর্যন্ত ঢাকা শহরের কোন রাস্তায় প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও জিপ গাড়ি চলবে না। সরকারি গাড়ি শুধুমাত্র সরকারি কাজে ব্যবহার করা যাবে, কোন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না। শুধুমাত্র মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ফায়ার ব্রিগেড সহ ইমার্জেন্সি সার্ভিসের গাড়ি চলবে। বলবেন প্রাইভেট গাড়ি বন্ধ করবেন কিভাবে, ওরা তো রোড ট্যাক্স দেয়, হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন রোড ট্যাক্স দেয় রাস্তায় চলা করার জন্য, রাস্তায় যানজট সৃষ্টি করার জন্য নয়, নির্বাহী আদেশে সবই সম্ভব। তারপরও যেহেতু ১২ ঘণ্টার বেশি গাড়ি বন্ধ থাকবে সেই অনুপাতে রোড ট্যাক্স কমিয়ে আনা যেতে পারে।

বলবেন এতদিন যারা আরাম-আয়েশে সরকারি গাড়িতে বা নিজের টাকায় কেনা গাড়িতে পা দুলিয়ে দুলিয়ে ঠান্ডা হাওয়া খেয়ে বেড়িছেন তাদের কি হবে? হ্যাঁ তাদেরও ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তায় সকল ধরনের প্রাইভেট ছোটো গাড়ি বন্ধ করে, বড় বড় প্রাইভেট এসি বাস নামাতে হবে, বিআরটিসি’র ডাবল ডেকার এসি বাস নামাতে হবে। এক একটা গাড়িতে ৫০ থেকে ১০০ জন যাতায়াত করবে। তারা বাড়তি ভাড়া দেবে। আর রাত ৯টা থেকে সকাল ৭ঃ০০ টা পর্যন্ত তো তাদের ফুটানিকা ডিব্বা ব্যবহারের কোন বাধা নেই । রাস্তায় তিনটি লেন থাকবে প্রথমে রিক্সা দ্বিতীয়টি মোটরসাইকেল ও থ্রিহুইলার, তৃতীয়টি শুধুমাত্র বাস সার্ভিসের জন্য। কেউ লেন পরিবর্তন করলে তার ড্রাইভিং লাইসেন্সে দাগ পড়বে, এভাবে তার লাইসেন্সে বছরে তিনটি দাগ পড়লে লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং ব্যতীত যত্রতত্র পার্কিং করলেই গাড়ির ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্সে দাগ পড়ে যাবে, বছরে তিনটি দাগ পড়লে লাইসেন্স ঘ্যাচাং। এ ব্যবস্থা করে দেখেন রাস্তার অবস্থা রাতারাতি চেঞ্জ হয়ে যাবে। কি আজব কান্ড আমাদের দেশে, ভুল করে ড্রাইভার আর জরিমানা দিতে হয় গাড়ির মালিককে। ডাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করা শুরু করুন দেখবেন কিরূপ ম্যাজিকের মত অ্যকশন শুরু হয়ে যায়।

কেউ হতো ভাববেন পাগলের প্রলাপ দেখছি, এদেশে কি এতকিছু সম্ভব। দেখবেনই তো জনাব, কারণ এ লেখাটি যে সচ্ছ আয়না মতো পরিস্কার। কাঙ্গালের কথা বাসি হলেই ফলে, আপনারা দেখে নিবেন ঢাকা শহরে স্থায়ীভাবে যানজটমুক্ত হওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই। উড়াল সড়ক, মেট্রো রেল, ফ্লাইওভার যাই বানান না কেন, এত ছোট শহরে এত বিপুল পরিমাণে প্রাইভেট কার , মাইক্রোবাস, জিপ গাড়ি,পিক-আপ ভ্যান পৃথিবীর কোন দেশে আছে বলুন। আমার এ দেশেও চলতে পারবে না।আমাদের উন্নয়ন সহযোগী জাইকা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে, রাস্তাঘাট, উড়াল পথ, ফ্লাইওভার তৈরি করার জন্য কেন সস্তায় এ ঋণ দিচ্ছে জানেন। এতো কৈ এর তেলে কৈ মাছ ভাজা, তাও আবার ফ্রিতে পাওয়া কৈ মাছ। যে পরিমাণ জাপানি গাড়ি এদেশে ইমপোর্ট হয়, এ ঋণ তার কাছে কিছুই না। গরীবের দেশে কিছু লোকের ফুটানিকা ডিব্বা, জ্বালানি তেল ও যন্ত্রপাতির জন্য যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয় এবং রাস্তার যে ক্ষতি হয়, জাইকাসহ বৈদেশিক ঋণ তার কাছে কিছুই না। এটা শুধু সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এই সিদ্ধান্ত নিয়েই দেখুন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কি পরিমান বেড়ে যায়।

অতীতে এ কথা সাহস করে লিখতে পারিনি, আজ লিখছি কারণ এদেশ দ্বিতীয় বার স্বাধীন হয়েছে। দ্বিতীয় স্বাধীনতার বিপ্লবী সরকার কি আমার কথাগুলো বুঝতে পারবেন, যদি বুঝতে পারেন তাহলে ভালো, না পারলে আরো ভালো- মা ভৈ যানজটের দিন চলে যাবে ।

 

সমাপ্ত

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৪