বিশেষ প্রতিনিধি: হাফেজ মোঃ সুলাইমান,
পরম করুনাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি বিশ্বজাহানের রব শান্তি বর্ষিত হোক শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর রহমত এবং বরকত।
রোজা ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সকল নবীগণের শরীয়তে রোজা ফরজ ছিল।উম্মতে মোহাম্মদীর উপর রমজানের রোজা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরীতে। রোজাকে আরবি ভাষায় সোওম বলা হয় । উহার অর্থ দহন, জ্বলন। সোওমের আরেক অর্থ কোন কিছু থেকে বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা। শরীয়তের পরিভাষায় সওমের অর্থ সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খানাপিনা যৌন ক্রিয়াকর্ম থেকে বিরত থাকা। প্রত্যেক মুসলমান বালেগ বিবেকসম্পন্ন নর-নারীর উপর রমজানের রোজা ফরজ।
রমজানের রোজা সম্পর্কে আল্লাহতালা ঘোষণা করেন। হে ঈমানদারগণ। তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতগণের উপর। আশা করা যায় তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুন ও বৈশিষ্ট্য জাগ্রত হবে (সূরা বাকারা- ১৮৩)
মহান আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেন। রমজান মাসে কুরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে, তা গোটা মানবজাতির জন্য জীবন-যাপনের বিধান এবং তা এমন সুস্পষ্ট উপদেশাবলিতে পরিপূর্ণ যা সঠিক ও সত্য পথ প্রদর্শন করে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য পরিষ্কাররূপে তুলে ধরে(সূরা বাকারা ১৮৫)
আল্লাহ তাআলা বলেন – রোজার সময় রাত্রি বেলা স্ত্রীদের সাথে সঙ্গম করা তোমাদের জন্য হালাল করে দেওয়া হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাক স্বরূপ (সূরা বাকারা-১৮৭)
মহান আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেন। আজ হতে যে ব্যক্তিই এ মাসের সম্মুখীন হবে তার পক্ষে পূর্ণ মাসের রোজা রাখা একান্ত কর্তব্য। আর যদি কেহ অসুস্থ হয় কিংবা ভ্রমণ কাজে ব্যস্ত থাকে তবে সে যেন অন্যান্য দিনে এ রোজা পূর্ণ করে লয়।( সূরা বাকারা -১৮৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত। উহা এক অত্যন্ত বরকত ময় মাস। আল্লাহ তাআলা এ মাসে তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়, এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং এ মাসে বড় বড় সেরা শয়তানগুলো আটক করে রাখা হয়, আল্লাহর জন্য এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম। যারা এই রাত্রির মহান কল্যাণ লাভ হতে বঞ্চিত থাকল,তারা সত্যিকার অর্থেই কল্যাণ হতে বঞ্চিত। (নাসায়ী,মুসনাদে আহমদ, বায়হাকী)
নবী( স) বলেছেন, যে লোক রমজান মাসের রোজা রাখবে ঈমান ও চেতনা সহকারে, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (বুখারী,মুসলিম, তিরমিজি, নাসাই, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)
নবী (সা) বলেছেন, রোজা ও কোরআন রোজাদার বান্দার জন্য শাফায়াত করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ আমি এ ব্যক্তি কে দিনের বেলা খাবার ও অন্যান্য কামনা বাসনা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, হে আল্লাহ আমি এ ব্যক্তিকে রাতে নিদ্রা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন, আল্লাহ তাআলা তাদের সুপারিশ গ্রহণ করবেন। (বায়হাকী,শুয়াবুল ঈমান)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথার আমল পরিত্যাগ করতে পারলো না। তবে এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করার আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারী)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন, যারা একদিন আল্লাহর পথে রোজা রাখবে, আল্লাহ তার মুখ মন্ডল জাহান্নাম হতে ৭০ বৎসর দূরে সরিয়ে রাখবেন। (বুখারী,মুসলিম তিরমিজি, ইবনে মাজা, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ) নবী করিম (সা) বলেছেন, জান্নাতের একটি দরজা আছে যার নাম রাইয়্যান, এই দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররা বেহেশতে প্রবেশ করবে । এছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন এই বলে ডাক দেওয়া হবে রোজাদার তোমরা কোথায়?
তোমরা এই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ কর, রোজাদার বেহেশতে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। অতঃপর এই পথে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।( বুখারী, মুসলিম)
নবী( স:)বলেছেন, আদম সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব দশ গুণ হতে ৭ শত গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা বলেছেন রোজা এই সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম কিন্তু আল্লাহ তাআলা বলেছেন। কেননা রোজা এক মাত্র আমারই জন্য। অতএব আমিই যেভাবে ইচ্ছা উহার প্রতিফল দিব।
রোজা পালনে আমার বান্দা আমাকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের ইচ্ছা বাসনা নিজের পানাহার পরিত্যাগ করে থাকে । রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি ইফতারের সময় এবং অন্যটি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভের সময়। নিশ্চয়ই জেনে রাখো রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট সুগন্ধি হতেও অনেক উত্তম। (বুখারী, মুসলিম)