ঢাকা   ২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । ৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
২০ নং ফোল্ডারের ১১ গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তার বেহাল দশা দুর্গাপুরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক হবিগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বাবুলের রোগ মুক্তি কামনায় চুনারুঘাট উপজেলা ও পৌর যুবদলের দোয়া মাহফিল। হিন্দু থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন একই পরিবারের- ০৪ জন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ” নতুন রূপে প্রকাশিত হওয়ায় চুনারুঘাটে কেক কাটা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত জৈন্তাপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে শ্রেনী কক্ষের সংকট বিশালপুর ইউনিয়নের মৎস্যজীবী দলের কমিটি প্রকাশ কুষ্টিয়ায় দখলবা‌জি-চাঁদাবা‌জি নি‌য়ে জেলা বিএন‌পির ক‌ঠোর হুঁশিয়ারি নতুন দুই সভাপতি পেল ইবির দুই বিভাগ জকিগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ না করার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন

মানবতার টানে, রক্তদানে সকল’কে এগিয়ে আসার আহবান- ওসি শ্যামল বণিক 

Dainik Muktir Songbad
  • প্রকাশিত : রবিবার, অক্টোবর ১৩, ২০২৪
  • 22 শেয়ার

মোঃ রুবেল আহমদ, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:

 

ওসি শ্যামল বণিক (সিলেট এসপি অফিস সাবেক ওসি বিশ্বম্ভরপুর) রক্তদানের বিষয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলেন রক্তদান করা কোনো দুঃসাহসিক বা স্বাস্থ্যঝুঁকির কাজ নয়। বরং এর জন্য একটি সুন্দর মন থাকাই যথেষ্ট।

তিনি আরো বলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও নিঃস্বার্থ উপহার হলো রক্তদান। জটিলতায় লিভারে আক্রান্ত রোগীসহ অগণিত মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে পর্দার আড়ালে থাকা যেসব হৃদয়বান স্বেচ্ছায় ও বিনা মূল্যে রক্তদান করেন, তাঁদের দানের মূল্যায়ন, শ্রদ্ধা জানাতে, স্বীকৃতি দিতে সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষ যাঁরা রক্তদানে ভয় পান, তাঁদের ভয় দূর করে রক্তদানে উৎসাহিত করতে। ওসি শ্যামল বণিক এর সহযোগীতায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ সদস্য লিভারের জটিল রোগে আক্রান্ত একজন রোগীকে অপারেশনের পূর্ব প্রস্তুতি পযর্ন্ত রক্তদানে এগিয়ে এসেছেন।

জনগণ’কে রক্তদানে উৎসাহিত করা, স্বেচ্ছায় রক্তদানে সচেতন করা, নতুন রক্তদাতা তৈরি করা ও নিরাপদ রক্ত ব্যবহারে উৎসাহিত করা। এবং দেশের জনগণকে প্রাণঘাতী রক্তবাহিত রোগ এইডস, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি ও অন্যান্য রোগ থেকে নিরাপদ রাখার জন্য স্বেচ্ছায় রক্তদান ও রক্তের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২৫ জন থ্যালাসেমিয়া শিশুর জন্ম হয় এবং প্রতি ১০ জনে ১ জন থ্যালাসেমিয়া-বাহক নির্ণীত করা হচ্ছে। কী ভয়াবহ! যেখানে প্রতি ব্যাগ রক্ত জোগাড় করতে থ্যালাসেমিয়া রোগীসহ অন্যান্য রোগী’র অভিভাবক’দের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। রক্ত না দিতে পারলে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ও বাঁচানো সম্ভব নয়।

রক্তদানে কোনো সমস্যা হয় না। কেননা, একজন মানুষের শরীরে সাড়ে ৪ থেকে ৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্তদান করা হয় সাধারণত ২৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার। এটি শরীরে থাকা মোট রক্তের মাত্র অল্প ভাগ। দেশে বছরে ৮ থেকে ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা থাকে। রক্ত সংগ্রহ করা হয় ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ ব্যাগ। বাকি তিন লাখ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহের জন্য প্রয়োজন জনগণকে সচেতন করা। রক্ত ছাড়া কোনো মানুষের জীবন কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু মানবদেহের এই অত্যাবশ্যকীয় উপাদানটির কোনো বিকল্প তৈরি করা সম্ভব হয়নি। মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে প্রায়ই জরুরি ভিত্তিতে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে থ্যালাসেমিয়া রোগী যারা রক্তের ওপর নির্ভরশীল অর্থাৎ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন ঠিক, এদের বেঁচে থাকার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন প্রতি মাসে এক বা একাধিক রক্তের ব্যাগ। থ্যালাসেমিয়া একটি মারাত্মক বংশগত রক্তের রোগ, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন পর্যাপ্ত হয় না বলেই রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙে যায়। ফলে এদের দেহে মারাত্মক রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীরা প্রতি মাসে এক-দুই ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করে জীবন ধারণ করে। আর এ কারণেই তাদের বেঁচে থাকাটাই পুরোপুরি নির্ভর করে হৃদয়বান রক্তদাতাদের ওপর। শুধু থ্যালাসেমিয়া রোগী নয়, কারও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, দুর্ঘটনায় আহত, সন্তান প্রসব, অ্যানিমিয়া, হিমোফিলিয়া, অস্ত্রোপচার, রক্তবমি,লিভার অপারেশন বা পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলেও রোগীর শরীরে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে।

নিয়মিত রক্তদান করা একটি ভালো অভ্যাস। রক্তদান করা কোনো দুঃসাহসিক বা স্বাস্থ্যঝুঁকির কাজ নয়। বরং এর জন্য একটি সুন্দর মন থাকাই যথেষ্ট। রক্তদাতার শরীরের কোনো ক্ষতি তো হয়ই না, বরং নিয়মিত রক্তদান করলে বেশ কিছু উপকারও পাওয়া যায়। বরং প্রতিবার রক্তদানের পর রক্তদাতার অস্থিমজ্জা নতুন রক্তকণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। ফলে রক্তদানের দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে সে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। শরীরের রক্তকণিকাগুলোর মধ্যে লোহিত রক্তকণিকার আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ ১২০ দিন। তাই আপনি যদি রক্তদান না-ও করেন আপনার এই লোহিত রক্তকণিকার ১২০ দিন পর নষ্ট হয়ে শরীরের অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে যাবে। তাই প্রতি চার মাস পরপর রক্তদানে শরীরের কোনো ক্ষতি নেই। এতে যেকোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে হঠাৎ রক্তক্ষরণ হলেও শরীর খুব সহজেই তা পূরণ করা যায়। রক্তদাতার রক্তে এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়াল পরজীবীর উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। রক্তদাতা রক্তদানের ফলে এই সব টেস্ট সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে করার সুযোগ পাবেন।

ওসি শ্যামল বণিক বলেন রক্তদানে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে এবং রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমে যায়। ফলে হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি মারাত্মক রোগের আশঙ্কা হ্রাস পায়। হার্ট ভালো থাকে এবং রক্তদাতা সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকেন। রক্তদানের সময় রক্তে নানা জীবাণুর উপস্থিতি আছে কি না, তা জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ফলে রক্তদাতা জানতে পারেন তিনি কোনো সংক্রামক রোগে ভুগছেন কি না। রক্তদানে শরীরের ফ্রি রেডিকেলস-এর পরিমাণ কমে যায়। তাই বার্ধক্যজনিত জটিলতা দেরিতে আসে। স্বেচ্ছায় রক্তদানে মানসিক প্রশান্তি আসে। কারণ, প্রতি দুই সেকেন্ডে বিশ্বে এক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। আপনার দান করা এক ব্যাগ রক্ত একজন মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে।

তিনি আরো বলেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রক্তদান ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।মানবিক, সামাজিক ও ধর্মীয়—সব দৃষ্টিকোণ থেকেই রক্তদাতা অনাবিল আনন্দ অনুভব করেন এবং সামাজিকভাবে বিশেষ মর্যাদাও পান। গ্রহীতা আর তার পরিবার চিরদিন ঋণী থাকেন তার জীবন বাঁচানোর জন্য। দাতার জন্য এটা যে কী আনন্দের, তা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়।

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৪